পলাশ বড়ুয়াঃ
রোহিঙ্গা অধ্যুষিত সীমান্ত উপজেলা উখিয়ায় দিনদিন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসা। বিপাকে বৈধ লাইসেন্সধারীরা। যার ফলে তথ্য-প্রযুক্তির যুগেও আধুনিক এই ব্যবসাকে জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করছেন বিশ্লেষকরা। অপরদিকে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। সম্প্রতি বিপুল সরঞ্জামসহ র্যাবের হাতে দুইজন আটক হলেও রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ পুরো উপজেলায় নামে-বেনামে অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ দিচ্ছে এসব অসাধু সিন্ডিকেট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উখিয়ায় বৈধ ভাবে লাইসেন্স নিয়ে ইন্টারনেট সেবায় নিয়োজিত রয়েছে মাত্র তিনটি প্রতিষ্ঠান। তৎমধ্যে উপজেলার পর্যায়ের সি ক্যাটাগরীর দুটি। তা হলো এস.জে এন্টারপ্রাইজ ও মীম অনলাইন। আরেকটি জাতীয় পর্যায়ের লিংক থ্রী টেকনোলজিস্ট লি:। তবে দীর্ঘদিন ধরে বিটিআরসিকে তথ্য গোপন করো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কোম্পানীর পপ (চঙচ) ঘোষণা করে অবৈধ রিসেলার ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কিছু অসাধু সিন্ডিকেট সদস্য।
অনুসন্ধানে এসব অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে, পালংখালী এলাকার নুরুল ইসলাম, মো: করিম, মো: শামশু। কুতুপালং এলাকায় মো: আরফাত, অপু বড়ুয়া।
উখিয়া সদর এলাকায় লাইসেন্সধারী দুইজন বৈধ ব্যবসায়ী হলেও প্রতিনিয়ত অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে যাচ্ছে জানে আলম। সে এশিয়া প্যাসিফিক নামে শুরু করে পরে আবার নোবাস নামে চালিয়ে দিচ্ছে। মূলত: জানে আলম একজন ক্যাবল অপারেটর্স ব্যবসায়ী। এছাড়াও উখিয়া সদরে নুরুল ইসলাম নামে আরেকজন এনজেল ড্রপ নামে ব্যবসা শুরু করলেও পরে জসিমকে সাথে নিয়ে আইসিসি এবং বর্ণিল নেটওয়ার্ক সিস্টেম নামে ইন্টারনেট সংযোগ দিতে গিয়ে সম্প্রতি র্যাবের হাতে আটক হয়।
কোটবাজারে হামিদুল হক নামে একজন হামিদ ওয়াইফাই জোন শিরোনামে ব্যবসা পরিচালনা করলেও কিছুদিন পূর্বে জাতীয় পর্যায়ের লিংক থ্রী টেকনোলজিস্টকে ব্যবসা হস্তান্তর করে দেয় বলে জানায়। সত্যতা যাচাই করার জন্য যোগাযোগ করা হলে লিংক থ্রীর কক্সবাজারের ম্যানেজার মো: ইব্রাহীম বলেন, পূর্বের প্রতিষ্ঠানের সকল গ্রাহকদের হস্তান্তর করায় জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দিয়ে নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করে বৈধ ভাবে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে লিংক থ্রী টেকনোলজিষ্ট।
পাশাপাশি কোটবাজারে অবৈধ ইন্টারনেট সংযোগ প্রদানকারী হিসেবে যাদের নাম উঠে এসেছে ক্যাবল ব্যবসায়ী সৈয়দ, ইসমাইল, দুলাল, সাঈদী, ফারুক, শাহাআমিন, ফরহাদ। সোনারপাড়া এলাকার খাইরুল আমিন, মরিচ্যা এলাকার ডিস ব্যবসায়ী কামরুল ও আব্দুল্লাহ। তারা কখনো ফ্রেন্ডস ডটনেট, কখনো ইনোভেটিব অনলাইন আবার কখনো ডিডিএন নামে অবৈধ পন্থায় ইন্টারনেট ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে যোগাযোগ করা হলে উখিয়ার ডিস ব্যবসায়ী জানে আলম বলেন, আমি পার্টনারশিপে নোবাসের সাথে বৈধ ভাবে ইন্টারনেট ব্যবসাও করছি। একই ধরনের কথা বলেন, পালংখালী এলাকার উইনার কমিউনিকেশনের অংশীদার নুরুল ইসলাম। তার প্রতিষ্ঠান থেকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে কোন ধরণের ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া হয়নি। আরো কয়েকজনের সাথে যোগাযোগ করা হলে সংযোগ না পাওয়ায় বক্তব্য তাদের নেয়া সম্ভব হয়নি।
এস জে এন্টারপ্রাইজ এর মালিক জিহান চৌধুরী ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উখিয়াতে লাইসেন্স নিয়ে ব্যবসা করা মহাপাপ। অবৈধ রিসেলাররা কখনো বৈধ ব্যবসায়ীদের ফাইবার কেটে দিচ্ছে। কখনো বা চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। আবার কখনো আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিচ্ছে।
তিনি এও বলেন, রোহিঙ্গাদের ইস্যুতে উখিয়া-টেকনাফ বিশ্বব্যাপী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এলাকা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। যার ফলে ক্যাম্প কেন্দ্রিক বিভিন্ন দেশের মানুষের আনা-গোনা যেমন বেড়েছে তেমনি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর বিচরণও বেড়েছে। কিছুদিন পূর্বে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহেরীর আইটি বিশেষজ্ঞ মেহেদী হাসান রানা নামে একজন আটক করে কাউন্টার টেরোরিজম। তাই সবাইকে আগে রাষ্ট্রের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করতে হবে। একইমত পোষণ করে মীম অনলাইন এর মালিক মো: হুমায়ুন বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আমাদের কোন সংযোগ নেই। সেই সাথে আমাদের সকল গ্রাহক নিবন্ধিত। ফলে জাতীয় ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে সহায়ক ভুমিকা রাখবে।
যদিও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন এসব অবৈধ ভাবে ইন্টারনেট সেবাপ্রদানকারী লাইসেন্সবিহীন প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি, অবৈধ রিসেলার, ডিস, ক্যাবল টিভি অপারেটর এর বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবরে চিঠি ইস্যু করলেও এখনো পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিতে যায়নি।
তবে র্যাব-১৫ এর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো: আবু সালাম চৌধুরী জানিয়েছেন, সম্প্রতি উখিয়া ও কোটবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিপুল সরঞ্জামসহ দুইজন অবৈধ ইন্টারনেট ব্যবসায়ীকে আটক করা হয়। আগামীতেও এধরণের অভিযান পরিচালা করা হবে বলে তিনি জানায়।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সেবার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে ১৪-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এর অধিনায়ক (পুলিশ সুপার) মো: নাইমুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের শুধুমাত্র মানবিক আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। তারা স্বজনদের সাথে কথা বলার জন্য রোহিঙ্গারা মোবাইল ব্যবহার করলেও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ নেই। তাই জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থে ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য সংশ্লিষ্টদের বলা হয়েছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের লীগ্যাল এন্ড লাইসেন্সিং বিভাগের পরিচালক এম.এ তালেব হোসেন বলেন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার লাইসেন্স গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কেউ যদি লাইসেন্স বিহীন এই সেবা প্রদান করে আইনের সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন এবং শাস্তিযোগ্য অপরাধ। যার ফলে আইন লঙ্গনকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ১০ বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক ৩শ কোটি টাকা অর্থদন্ড বা উভয়দন্ডে দন্ডিত হবে।
আমরা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।